বরিশাল নিউজ
প্রকাশ : ১৬ আগষ্ট ২০২৫, ১১:৩০ পিএম
ন্যাশনাল ইলেকট্রো ইকুইপমেন্ট মেইনটেন্যান্স ওয়ার্কশপ অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টার (নিমিউ অ্যান্ড টিসি) থেকে আসা সাত সদস্যের কারিগরি টিমের মাধ্যমে শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৯৫টি অচল মেশিন সচল করা হয়েছে। এছাড়াও এনজিওগ্রাম, সিটি স্ক্যান, এক্সরে, লেসিক, ওসিটি, লিথোরিপটর, এন্ডোসকপি সহ আরো ২০টি মেশিন সচল করার প্রক্রিয়া হাতে নেয়া হয়েছে।
শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম মশিউল মুনীর’র বিশেষ অনুরোধে গত সপ্তাহে নিমিউ অ্যান্ড টিসি থেকে পাঁচ সদস্যের কারিগরি টিম হাসপাতালে আসেন। তারা সকল মেশিন সরেজমিনে পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষানিরীক্ষা করেন। পরবর্তীতে হাসপাতালের নিজস্ব টেকনিশিয়ানের সাথে নিমিউ অ্যান্ড টিসি থেকে আরো দুইজন টেকনিশিয়ানকে এনে এই কারিগরি টিমে সংযুক্ত করেন পরিচালক। গত চার দিন ধরে কারিগরি টিমের সদস্যরা হাসপাতালের রেডিওলজি এবং ইমেজিং, প্যাথলজি, সিসিইউ, আইসিইউ, অপারেশন থিয়েটার, চক্ষু বিভাগ, সাজারি, নাক-কান-গলা বিভাগের বিভিন্ন অকেজো মেশিন মেরামতের কাজ করেন।
কারিগরি টিমের সদস্য উপ-সহকারী প্রকৌশলী (অপটিক্যাল) হাফিজুর রহমান বলেন, গত চার দিন ধরে নিমিউ অ্যান্ড টিসি থেকে আসা টিম ৬টি অ্যানেস্থেসিয়া মেশিন, ২৫টি সাকশন মেশিন, ১০টি আইসিইউ ভেন্টিলেটর, ৫টি অটোক্লেভ, ১ টি সি-আর্ম মেশিন, ২টি মনিটার, ৮টি ওটি টেবিল, ৫ টি ব্লাড ব্যাংক রেফ্রিজারেটর, ১০টি হাই ফ্লো নাসাল ক্যানুলা, ৫ টি আইসিইউ বেড, ৬ টি ওটি লাইট, ৫টি ডেন্টাল ইউনিট, ২টি ডায়াথার্মি মেশিন, ৪ ইসিজি মেশিন ও ১টি এক্সরে মেশিন সহ ৯৫টি মেশিন মেরামত শেষে সচল করতে সক্ষম হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, হাসপাতালের একটি করে ইকো, কার্ডিয়াক ডিফাইব্রিলেটর, কার্ডিয়াক মনিটার, ইসিজি ক্যাথল্যাব (এনজিওগ্রাম), সিটি স্ক্যান, চোখের লেসিক, চোখের ফ্যাকো, অপটিক্যাল কোহেরেন্স টমোগ্রাফি (ওসিটি), ইউরোলজি লিথোরিপটর, আরো ১টি সি-আরম, ২টি করে এক্সরে, এন্ডোসকপি মেশিন মেরামত শেষে চালু করা হবে। এই মেশিনগুলোর বিভিন্ন যন্ত্রাংশ আমাদের দেশে না থাকায় বিদেশ থেকে সরবরাহ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। সে জন্য সময় দিতে হবে। দক্ষ টেকনোলজিস্ট কিংবা জনবলের অভাবে দীর্ঘ দিন মেশিন গুলো বন্ধ থাকায় এই সমস্যার সৃস্টি হয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
ন্যাশনাল ইলেকট্রো ইকুইপমেন্ট মেইনটেন্যান্স ওয়ার্কশপ অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টার (নিমিউ অ্যান্ড টিসি) থেকে আসা কারিগরি টিমে বাকী ছয় সদস্য হলেন, উপ-সহকারী প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) শুভদেব সরকার, উপ-সহকারী প্রকৌশলী (ইলেকট্রনিক্স) অপু সরকার, উপ-সহকারী প্রকৌশলী (আরএসি) মো. মাহাবুব হোসেন, টেকনিশিয়ান (ইলেকট্রনিক্স) মো. তৌহিদুর জামান, টেকনিশিয়ান আওলাদ হাসান ও টেকনিশিয়ান কাউছার হোসেন।
হাসপাতালের টেকনোলজিস্ট মিথুন রায় বলেন, হাসপাতালের রক্ত পরিসঞ্চালন কেন্দ্রসহ রেডিওলজি এবং ইমেজিং, প্যাথলজি, সিসিইউ, আইসিইউ, অপারেশন থিয়েটার, চক্ষু বিভাগ, সাজারি ও নাক-কান-গলা বিভাগের প্রায় শতাধিক মেশিন সচল করা হয়েছে। মেশিনগুলো দিয়ে রোগীরা যেমনি সেবা পাচ্ছেন, তেমনি আমরাও সেবা দিতে পারছি।
এ ব্যাপারে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম মশিউল মুনীর বলেন, দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালের অনেক মেশিন অকেজো অবস্থায় ছিল। সেগুলো মেরামত করে সচল করা হয়েছে। বাকী মেশিনগুলো সচল করতে যন্ত্রাংশ আমদানি করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, রোগী সেবার মান বৃদ্ধির জন্য আমরা আগামী সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরের মধ্যে একটি এমআরআই মেশিন, ক্যাথ ল্যাব ও সি-আম মেশিন পেতে যাচ্ছি।
তিনি আরো বলেন, মানুষকে বুঝতে হবে হাসপাতালে রোগী সেবার জন্য যে পরিমাণে জনবল প্রয়োজন তা আমাদের নেই। তাই এব্যাপারে সবাইকে যেমনি সচেতন হতে হবে, তেমনি আমাদের সহযোগিতা করতে হবে।
উল্লেখ্য, ২০ দিন আগে বরিশালে ছাত্র জনতা শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজসহ সারা দেশের স্বাস্থ্যখাত সংস্কারের আন্দোলন শুরু করে। নানান কর্মসূচির পাশাপাশি অনশনও করেন শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবির প্রতি গুরুত্ব না দেওয়ায় এক সময় আন্দোলনকারীরা সড়ক যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়ার কর্মসূচি নেয়। এতে দুর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা। এরপরই স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা নড়াচড়া শুরু করেন। স্বাস্থ্য ডিজি বরিশাল এসে আন্দোলন বন্ধ করার হুশিয়ারি দেন। এদিকে একই সময় শেবাচিম হাসপাতাল প্রশাসন সংবাদ সম্মেলন করে আন্দোলনকারীদের কাছে সময় চান। এরই ফলশ্রুতিতে মাত্র সাত দিনের উদ্যোগে অচল মেশিন সচল হতে শুরু করে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: শাহীনা আজমীন ।। স্বত্ব © বরিশাল নিউজ ২০২৫
Developed By NextBarisal
মন্তব্য লিখুন