শরীফ হোসাইন , ভোলা
প্রকাশ : ২৩ জুন ২০২৫, ০৫:৪০ পিএম আপডেট : ২৩ জুন ২০২৫, ০৫:৪৬ পিএম
ভোলার রয়েছে ছোট-বড় নদী-নালা, খাল ও মুক্ত জলাশয় । সেখানে খাঁচায় মাছ চাষ করে ভাগ্য ফেরানোর চেষ্টা করছেন মৎস্যচাষীরা। এতে বদলে যাচ্ছে উপকূলের অর্থনীতির চিত্র।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চাষবাস ও ব্যবসা-বাণিজ্যে লোকসানে সংসার চালানোই দায় ছিল বেশির ভাগ মৎস্য চাষির। এখন কম পুঁজিতে বেশি লাভজনক হওয়ায় ভাসমান এ পদ্ধতিতে মাছ চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন ভোলার মৎস্যজীবীরা। তাই স্থানীয় মাছ চাষিদের কাছে ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে নদী ও খালে খাঁচায় মাছ চাষ পদ্ধতি। এতে করে উপকূলীয় জেলায় বেকারত্ব দূরীকরণের পাশাপাশি দিন দিন মৎস্য উৎপাদনও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, ভোলা সদর উপজেলার চরসামাইয়া, শান্তিরহাট, ভেলুমিয়া ও ভেদুরিয়া এলাকার নদী ও খালের মুক্ত জলাশয়ে শতাধিক মৎস্য খামার গড়ে উঠেছে। এ পদ্ধতিতে মাছ চাষ করতে জি আই পাইপ, ড্রাম, নেট দিয়ে তৈরি করা হয় খাঁচা। আর প্রতিটি খাঁচা তৈরিতে খরচ হয় প্রায় ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। একটি খাঁচায় সর্বোচ্চ এক হাজারের মত মাছ চাষ করা যায়। এতে প্রয়োজন হয় না নিজের পুকুর কিংবা জলাশয়। পুঁজিও লাগে কম।
মাছ চাষিরা জানান, বছরে দুইবার খাঁচায় মাছ চাষ করা যায়। প্রতিটি খাঁচায় বছরে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা লাভ হয়। খাঁচায় মনোসেক্স প্রজাতির তেলাপিয়া, পাঙাস, সরপুঁটি ও কার্প জাতীয় মাছ চাষ করা যায়। ৩ থেকে ৪ মাসে বিক্রির উপযোগী হয় এসব মাছ। নদীর সংযোগস্থল এ ধরনের চাষ পদ্ধতির উপযোগী হওয়ায় মাছগুলো মিঠা পানির মতই সুস্বাদু হয়।
উদ্যোক্তারা জানান, প্রবাহমান নদীতে মাছ দ্রুত বড় হয়। প্রাকৃতিক পরিবেশে রোগ বালাইয়ের ঝামেলা কম, স্বাদেও সুস্বাদু। বাজারের ব্যাপক চাহিদায় লাভবান হওয়া যায় সহজেই। কথা হয় উদ্যোক্তা মো: আনোয়ারের সঙ্গে। তিনি বলেন, শুরুর দিকে ভাবতে পারিনি এত দ্রুত এ ধরনের সফলতা পাবো। ক্রমেই আমরা এ পদ্ধতিতে মাছ চাষের পরিসর বাড়াচ্ছি। এটি কিন্তু পুকুরে চাষ করা মাছের মতো নয়। বলা যায়, প্রাকৃতিক ভাবেই মাছ বেড়ে উঠছে। এজন্য এই মাছের কালার ভালো হয়, বৃদ্ধিও পায় বেশি। সবমিলিয়ে অন্যান্য মাছের তুলনায় আমাদের মাছের স্বাদও অনেক বেশি। ফলে চাহিদাও আছে অনেক।
ভেদুরিয়া গ্রামের পঙ্গাসিয়া নদীতে স্থাপিত ১০০টি খাঁচার প্রতিটি থেকে বছরে ৬০০ কেজি করে মোট ৬ মেট্রিক টন মনোসেক্স তেলাপিয়া উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা উদ্যোক্তাদের। যার বাজারমূল্য প্রায় ৮ লাখ টাকা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ পদ্ধতিতে মাছ চাষের পরিসর বাড়াতে সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন।
তারা জানান, স্থানীয় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা গ্রামীণ জন উন্নয়ন সংস্থা (জিজেইউএস) অর্থায়ন ও পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ)’র সহযোগিতায় খাঁচায় মাছ চাষ পদ্ধতি স্থানীয় মৎস্যজীবীদের কাছে পরিচিতি পায়।
এ বিষয়ে গ্রামীণ জন উন্নয়ন সংস্থা (জিজেইউএস)’র টেকনিক্যাল অফিসার (ফিসারিজ) আরিফজ্জামান বলেন, এ পদ্ধতিতে মাছ চাষে শুধু চাষির ভাগ্য পরিবর্তন হচ্ছে তা নয়;কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে।
মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, উপকূলীয় নদী ও মোহনায় এই পদ্ধতিতে মাছ চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে জেলার ৭ উপজেলায়। খাঁচায় মাছ চাষের সাথে হাজারেরও বেশি শ্রমজীবী মানুষ জড়িত। পুকুরের চেয়ে নদীতে মাছ দ্রুত বৃদ্ধি পায়। আবার প্রবহমান পানিতে প্রজনন ও বৃদ্ধির কারণে মাছের স্বাদও বেশি হয়। বাজারেও এ মাছের চাহিদা বেশি হওয়ায় দামও বেশি পাওয়া যায়।
সম্পাদক ও প্রকাশক: শাহীনা আজমীন ।। স্বত্ব © বরিশাল নিউজ ২০২৫
Developed By NextBarisal
মন্তব্য লিখুন